সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা :
জাতীয় পর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারী উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে ‘তাড়াশ ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক যুব মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’ মনোনীত হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি আদিবাসী নারী মিনতি বসাক। তাড়াশের আদিবাসী পল্লির পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে মিনতির নিরলস পরিশ্রম। সেটা এক অসাধারণ গল্প। মিনতি বসাকের জন্ম কক্সবাজারের মহেষখালী উপজেলার হোয়ানক বড়াছড়া গ্রামে। তিনি ২০০০ সালে বেড়ানোর জন্য নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চ-িগড় গ্রামে নিত্যানন্দ গোস্বামীর (যিনি নয়ন সাধু নামে সমধিক পরিচিত) অনাথ আশ্রমে আসেন। সেখানে আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নিত্যানন্দ গোস্বামীর সান্নিধ্যে এসে পিছিয়ে পড়া নারীর জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই আশ্রমের সদস্য সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার আদিবাসী পল্লি ধলাপাড়া গ্রামের জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং বিয়ে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে বুঝতে পারেন গ্রামের আদিবাসী নারীর ক্ষুধা, দরিদ্রতা, অশিক্ষা, চিকিৎসাবঞ্চনা ও পারিবারিক সহিংসতার সাতকাহন। শুরু করেন তাদের ভাগ্য উন্নয়নের কাজ। প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তাদের বোঝাতে সক্ষম হন তারা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও অসম্ভব স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছেংন। তাদের সন্তানরাও শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিকার হচ্ছেন বাল্যবিয়ের। এজন্য ভর্ৎসনা, অপবাদ ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে মিনতিকে। কিন্তু থেমে থাকেননি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গুড়পিপুল আশার প্রদীপ সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনভুক্ত হয়।
মিনতি ২০০২ সালে তাড়াশের ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় আদিবাসী নারীদের জন্য স্যানিটারি লাট্রিনের ব্যবস্থা করেন। বেকার নারীদের জন্য ৭টি সেলাই মেশিন সংগ্রহ করেন। বাল্যবিয়ে, বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীর স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক করতে থাকেন। ধলাপাড়া গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সনাতনী ঝাড়ফুঁক ছেড়ে তারা চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া শুরু করেন। পরে সমিতির সদস্যদের সহযোগিতায় গুড়পিপুল পাকা সড়কের ধারে ৩ লাখ টাকায় কেনেন ১৫ শতক জায়গা। সেখানে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেন। সেখানে ১০টি সেলাই মেশিন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আদিবাসী নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গড়ে তোলা হয় একটি লাইব্রেরিও। ২০১৩ সালে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া ১৩ লাখ টাকায় স্থাপন করেন তাঁতশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১২টি বিদ্যুৎচালিত পাওয়ার লুমে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি শুরু হয়। আরো আছে সমিতির ১টি সিএনজি। তার নিরলস প্রচেষ্টায় এলাকার নারীদের অনেকেই এখন আত্মনির্ভরশীল। তাড়াশ মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাসরিন বলেন, কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মিনতি বসাক ২০১৫ সালে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মনোনীত হয়েছেন।
এ/হ