আবেদ হোসাইন, যশোর প্রতিনিধি :
বছর জুড়ে যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালান সিন্ডিকেটে অভিযান চালিয়ে ১৮৫ কেজি স্বর্ণ জব্দের রেকর্ড করেছে বিজিবিসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। উদ্ধার হওয়া ওই স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য দেড়শো কোটি টাকা। চোরাকারবারী আটক ও স্বর্ণ উদ্ধার সাফল্যের প্রথম তালিকায় রয়েছে যশোর ৪৯ বিজিবি, দ্বিতীয় অবস্থানে ২১ খুলনা বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যশোর জেলা পুলিশ। উদ্ধারের বাইরে সীমান্তের বিভিন্ন চোরাচালানী ঘাট ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দীর্ঘদিন বিপুল পরিমান স্বর্ণের বার ভারতে পাচার করেছে এক শ্রেণির চোরাকারবারী ও বহণকারীরা। কিন্তু ,দিনের পর দিন বছরের পর বছর এসব অভিযানে শুধু বহনকারী শ্রমিকই আটক হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছে গড ফাদার রাঘব-বোয়ালরা। বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়েছে, কেনার ক্ষেত্রে ভারতে স্বর্ণের উপর শুল্ক বেশি হওয়া এবং যশোরের বেনাপোল থেকে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার যাতায়াত দূরত্ব সুবিধা হওয়ায় স্বর্ণ চোরাচালানীরা এই রুট পছন্দ ও ব্যবহার করছে। এ বছরে যশোরের সীমান্তগুলো থেকে যে সামান্য পরিমাণ সোনা ধরা পড়েছে তার ওজন ১৮৫ কেজি ৭৩৯ গ্রাম। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আটক হয়েছে ৫৫ জন স্বর্ণ পাচারকারী। ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, খুলনার অধিভুক্ত সীমান্তগুলো দিয়ে ভারতে পাচারকালে এই বিপুল পরিমাণের স্বর্ণ জব্দ করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। সোনা ও স্বর্ণের বার জব্দের তালিকায় সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন। এ ব্যাটেলিয়ানের অধিভুক্ত সীমান্তগুলো দিয়ে জব্দকৃত স্বর্ণের পরিমাণ ৭৯ কেজি ৪৭৩ গ্রাম। যার বাজার মূল্য ৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিজিবি ব্যাটেলিয়ন। এই ব্যাটেলিয়ানের অধিভুক্ত সীমান্তগুলো দিয়ে ভারতে পাচারের সময় জব্দ করে ৪২ কেজি ৪০৭ গ্রাম স্বর্ণ। এসব স্বর্ণের বাজার মূল্য ৩০ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ১৭৮ টাকা। এসব স্বর্ণ পাচারের সাথে জড়িত থাকায় বিজিবি সদস্যরা ১৮ জন পাচারকারীকে আটক করেন। একই সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিভুক্ত সীমান্ত গুলো দিয়ে ৪ কেজি ৪৫১ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৯ টাকা। যশোরের শার্শা থানা ও যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ১৭ কেজি স্বর্ণসহ ৪জনকে আটক করেন। এছাড়া বেনাপোল থেকে দুই কেজি সোনাসহ একজন ভারতীয় ট্রাক চালককে আটক করা হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রমকালে বিএসএফ ভারতীয় খালি ট্রাকটি তল্লাশি করে ট্রাকের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় চালক সাইফুল মন্ডল (৩৫) কে আটক করা হয়। গত ৫ নভেম্বর স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়। যার ওজন ৭ কেজি ১২ গ্রাম। মূল্য অনুমানিক ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর খুলনা ২১ বিজিবি বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত থেকে ১ কেজি ৯শ’৮৩ গ্রাম ওজনের ১৭টি স্বর্ণবার উদ্ধার হয়। সোনার চালানসহ আটককৃতদের অনেককে স্বর্ণমানব বলা হচ্ছে। গত এক বছরে বিশাল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার ও ৫৫ জন আটক হলেও ওই চোরাকারবারী চক্রের পালের গোদা গডফাদাররা চলছে আটক এড়িয়ে। আটক ও উদ্ধারে বেশি সাফল্য দেখানো যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সায়েদ মিনহাজ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি ব্যাটালিয়নে যোগদানের পর থেকে সীমান্ত জুড়ে চোরাচালান রোধে ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারণে এক বছরে সীমান্ত জুড়ে অভিযানে বিপুল পরিমাণ সোনা জব্দ করা সম্ভব হয়েছে।
এ/হ