রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কাল। আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে সকাল সাড়ে ৮ টা হতে বিকেল ৪টা প্রর্যন্ত। রবিবার শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। ব্যস্ত সময় পার করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত নির্বাচন কমিশনের তৎপরতাও বাড়ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সব ধরনের প্র¯‘তি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন হবে। এজন্য রংপুরে ৩ হাজারের বেশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আগেই চলে এসেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও শেষ প্রায়।
এবারের নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন ৪৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট। ইতোমধ্যে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৫ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিন আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর নির্বাচনী এলাকায় ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসি।
সূত্র আরো জানিয়েছে, নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম রংপুর নির্বাচন ভবনে রাখা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনীত ব্যক্তিরা ইভিএম কাস্টমাইজেশন সেন্টারে উপ¯ি’ত হয়ে কাস্টমাইজেশনের বিভিন্ন দিক অবলোকন করতে পারবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রশিক্ষিত দুইজন কর্মকর্তা/কর্মচারী কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ভোটগ্রহণের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণের আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের বিপরীতে ব্যালট ইউনিটে প্রতীক সন্নিবেশিত রয়েছে কি না তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যাচাই করবেন।
চলছে শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণা : গত ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের প্রচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রংপুর নগরী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা, হাটবাজার চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। বসে নেই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক, আত্মীয় স্বজনরাও। বিভিন্নস্থানে পথসভা ও গণসংযোগে শীতের আমেজ কেটে এখন সবাই ব্যস্ত ভোটের আমেজে। প্রার্থীরা নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ডিজিটাল মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক প্রচারণা। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসাতে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভোটের মাঠে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবার সম্ভবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা না থাকায় ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালও প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস দিচ্ছেন।
এছাড়া চোখে পড়ার মত না হলেও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাসদের শফিয়ার রহমান, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে ৯ জন মেয়র ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৬৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১৮৩ জনসহ মোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাব হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে প্রার্থীদের মধ্যে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে সবাইকে বারবার উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হয়েছে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি জনবহুল এলাকাগুলোতে ইভিএম প্রদর্শন করা হয়েছে। মক ভোটিং প্রদর্শনও শেষ হয়েছে সবমিলিয়ে আমাদের প্র¯‘তি প্রায় সম্পন্ন। ভোটগ্রহণের আগে ও পরে নির্বাচনী অপরাধ রোধে পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবেন ৪৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এদের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৩ জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ১৬ জন। এখন প্রর্যন্ত কয়েকজন সাধারণ কাউন্সিলরকে ১০-১৫ হাজার টাকা জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।
‘ভোটে শঙ্কা নেই, একতরফা নির্বাচন হবে’-মোস্তফা : রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে ভোট নিয়ে কোন শঙ্কা নেই বলে জানিয়ে একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রচার প্রচারণার শেষ দিন দুপুরে নগরীর জীবন বীমা মোড়ে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন,’ভোট নিয়ে আমাদের কোন শঙ্কা নেই । তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করতে আসা যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি । নির্বাচন কমিশন একটা ফেয়ার গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করার কমিটমেন্ট করেছে আমরা সেই নিরিখে আস্থা রেখে আমরা নির্বাচন করছি। আমরা মনে করি যে নির্বাচন অবাধ হবে’।
সদ্য বিদায়ী এই মেয়র বলেন, এর আগে সরকারি দলের মেয়র পাঁচ বছরে ২৭০ কোটি টাকার উন্নয়নে কাজ করলেও আমার আমলে সাড়ে বারোশো কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান এজেন্ডা রংপুরের প্রাণ শ্যামা সুন্দরী খাল দখলমুক্ত করতে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে মেয়র হিসেবে আমার করা উন্নয়ন, জনসম্পৃক্ততা বিবেচনা করে লাঙলের গণজোয়ার উঠেছে।
ইভিএম নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও এর পেছনের কারিগরদের নিয়ে শঙ্কা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে গাইবান্ধার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শান্ত রংপুর আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হবে এবং ইভিএম নিয়ে বিরোধীদলগুলোর যে অনাস্থা তা প্রকট হবে।
এদিকে নৌকা মার্কার প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া গণসংযোগকালে বলেন, রংপুরের লোক নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা নৌকা মার্কা ছাড়া কোথাও ভোট দিবে না। তারা রংপুরের উন্নতি চায়। আমি আমার বিপরীতে কোন প্রার্থী দেখি না, যে আমার সাথে লড়াই হবে। অনেকে দাড়িয়েছে সকলকে আমি একই মনে করি আলাদা ভাবে দেখার মতো কেউ নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালের নেতৃত্বে শেষ দিনের একটি মিছিল নগরীর মূল-মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। পাশাপাশি সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও শেষ দিনে মিছিল করতে দেখা যায়। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের কথা বললে তারা জানান অমুক প্রার্থী করেছে আমরাও করবো। জরিমানা দিতে হলেও মিছিল করবো। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিছিল বের করার কারণে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ১০-১৫ হাজার টাকা জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিটি করপোরেশন গঠন করার পর রংপুরে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
এ/ হ