ডেক্স রিপোর্ট-
সবশেষ ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল মেসির দল। এবারও তারা সেই দলকেই হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। এখন তারা অনেকটা আরেকটি ফাইনালের দোরগোড়ায়। হ্যাঁ, আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বাস, ক্রোয়েশিয়ার বাধা পেরিয়ে সহজেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব ফাইনালে।
কারণ মেসির পায়ে এবার ম্যারাডোনার রং, সেই পায়ে ফাইনাল রাঙিয়ে আরেকটি শিরোপা উপহার দিয়েই মেসি-ম্যারাডোনা একাকার হয়ে যাবেন বিশ্বকাপে।
২০১০ সালের বিশ্বকাপে দুই তারার মিলনে আর্জেন্টিনা রূপ নিয়েছিল মেসিডোনায়। তবে সেই যাত্রায় অপরূপ কিছু হয়নি। বরং দুঃখই বেড়েছিল আলবিসেলেস্তেদের। ফুটবলার ম্যারাডোনা আর কোচ ম্যারাডোনায় যে বিস্তর ফারাক! সেই থেকে বিশ্বকাপ হয়ে গেছে মেসির একার অভিযান।পুরো জাতির স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে ছুটছেন একাই। দলের বাকিরা যেন সাহায্যকারীর ভূমিকায়। নাটকের পার্শ্ব-অভিনেতা। মহানায়কের চরিত্রে তিনি সফল হলেই তার ভাগ নেবেন তাঁরা। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কণ্ঠেও শুধু মেসির জয়গান। তাদের বিশ্বাস, লিওনেলে মিলবে বিশ্বকাপ সুধা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেভাবেই এগোচ্ছিল সব কিছু। ফাইনালে উঠে জার্মানির বিপক্ষে মাঠে কড়া মার্কিংয়ে থেকেও তিনি সুযোগ তৈরি করে দিয়েও পারেননি সতীর্থদের ব্যর্থতায়। রাশিয়া বিশ্বকাপও কেটেছে সেই ব্যর্থতার যন্ত্রণায়।
এবার বুঝি একটু ভিন্ন। খুদে জাদুকর পাশে পেয়েছেন আরেক লিওনেলকে; লিওনেল স্কালোনি। খুব তরুণ কোচ, তবে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী মানুষটি খাদের কিনারা থেকেও দলের ভাগ্য ফেরাতে জানেন। নুইয়ে পড়া দলকে জাগিয়ে তুলতে পারেন। ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে কাতার এসে সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ধাক্কা খেয়েছিল তাঁর দল। তরুণ আর্জেন্টিনা দলটি কখনো এমন দুর্দশার মধ্যে পড়েনি, তাই জেগে ওঠার তরিকা অজানা খেলোয়াড়দের। খাদের কিনারা থেকে তাঁদের জাগিয়ে তুলে এই কোচ এঁকে দিয়েছেন বিশ্বকাপ স্বপ্নের মায়াঞ্জন। এর আগে ব্রাজিলের মাঠে স্বাগতিকদের হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতিয়ে লিওনেল স্কালোনি দেখিয়েছেন তাঁর ম্যাজিক। তাঁর কোচিংয়ে ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটে আর্জেন্টিনার। ঘোচে লিওনেল মেসির দুর্নাম। আকাশি-সাদার জার্সিতে এটাই জাদুকরের প্রথম শিরোপা।
এর পর থেকে লিওনেল মেসির কাছেও তিনি হয়ে গেছেন স্বপ্নপূরণের কোচ। তাই স্কালোনেটার ছবিটিই হিট করে গেছে আর্জেন্টিনায়। ছবিতে দুই লিওনেলকে গাড়ির সামনে বসিয়ে দলের বাকিদের রাখা হয়েছিল পেছনে। সেই গাড়ির নাম ‘স্কালোনেটা’। নতুন গাড়িতে মেসির স্বপ্ন আরো জোরালো হয়েছে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে। শিরোপার মাত্র দুই ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে ‘ম্যারাডোনার আশীর্বাদ’ প্রার্থনা করেছেন। ফুটবল ঈশ্বরের মতো জাদুকরও চান আর্জেন্টিনার মানুষের হৃদয় জিততে।
অথচ ফুটবল তাঁর জীবনটা এমনভাবে রাঙিয়ে দিয়েছে যে সেখানে অন্য কারো হানা দেওয়ার সুযোগ নেই। গোলে, ট্রফিতে ভরা ক্যারিয়ারে তাঁর কোনো কিছুরই অভাব নেই। ক্লাব দলের হয়ে ৭৯০ গোল করা পিএসজি তারকা জাতীয় দলের হয়ে করেছেন ৯৫ গোল। গোলের সংখ্যায় ডিয়েগো ম্যারাডোনা অনেক পেছনে। ১০টি লিগ শিরোপার সঙ্গে ২৪টি ঘরোয়া ট্রফি। সেখানে ম্যারাডোনার আছে মাত্র তিনটি লিগ এবং আটটি ঘরোয়া ফুটবলের ট্রফি। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ ৭৩ গোল করা এই ফুটবল জাদুকর জিতেছেন সাতটি ব্যালন ডি’অর। এসব জায়গায় ম্যারাডোনাকে পেছনে ফেলা মেসির অপূর্ণতা শুধু বিশ্বকাপে। ম্যারাডোনা শুধু এই বিশ্বকাপ দিয়েই পুরো জাতিকে রাঙিয়ে দিয়েছেন। কখনো শিরোপার আলিঙ্গনে হাসিয়েছেন, কখনো বা ভাসিয়েছেন হতাশার কান্নায়। তাঁর ছিল এক অদ্ভুত কারিশমা, ফুটবলের বাইরেও হাসি-কান্নায় দোলাতে পারতেন জাতিকে। আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ের সেই আসন নিতেই কাতার বিশ্বকাপে নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়ছেন ফুটবলবিশ্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ফুটবলারটি। তাঁর সারথি হয়ে লিওনেল স্কালোনিও নেদারল্যান্ডস ম্যাচ জিতে বলছেন মেসির মতো খেলোয়াড় দলে পাওয়া অনেক আনন্দের, ‘লিও দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে দেখিয়েছে, সে-ই হলো সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ওর মতো খেলোয়াড় দলে থাকা অনেক আনন্দের। ’
আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য কাতার বিশ্বকাপ মহানন্দের। প্রথম ম্যাচে অভাবিত হারের শোক কাটিয়ে দল এখন সেমিফাইনালে। ফর্মের তুঙ্গে আছেন লিওনেল মেসিও। উৎসবের সব উপাদানই আছে আর্জেন্টাইনদের।আর মাত্র দুটো ম্যাচ। তারপরেই আসবে সেই মাহেন্ত্রক্ষণ। সেই অপেক্ষায় গোটা বিশ্বের মেসিভক্তরা।