ডেক্স রিপোর্ট-বিশ্বকাপ কে জিতবে সেটি এখনা অজানা। কিন্তু এরইমধ্যে তাকে ঘিরে উন্মাদনা বেড়ছে অনেকখানি।
তৃতীয় বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা কাতারেই জিতবে কি না, সেটি সময়ই বলবে। তবে এবারের আসরে দর্শক উন্মাদনায় আর সব দেশকে পেছনে ফেলেছে আর্জেন্টিনা। উদযাপনে যেন আলবিসেলেস্তেদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই!
যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। পুরো কাতার মাথায় তুলে রাখছে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।
কয়েক দিন কাতারে ঘুরলে মনে হবে, বিশ্বকাপে শুধু আর্জেন্টিনাই খেলছে। আর দেশটাও তাদের। সবখানে আকাশি-সাদার এমনই আধিপত্য অন্য কোনো দল তুলনায় আসছে না। এখন বলবেন, ব্রাজিলের ম্যাচে তো হলুদে রাঙিয়ে যায় স্টেডিয়াম। সেটা যায়। কিন্তু গলা ফাটিয়ে গান গেয়ে আর তুমুল নেচে, স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে সমর্থন করার দল একটাই। এমন সোল্লাস উপস্থিতিতে মাঠে প্রতিপক্ষেরও পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা হয়! অস্ট্রেলিয়া-আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরু হতে না হতেই পাশে বসা লরেঞ্জোর গলায় সুর খোলে, ‘দি লা মানো, দি লিও মেসি…। ’ গানটা বড়, তবে ওই প্রথম কলির অর্থ হলো, ‘লিওনেল মেসির হাতে হাত রেখে চলছি আমরা সবাই। ’ আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলছে ১১ জন, কিন্তু গানটা একজনকে ঘিরে! এতে দলের অন্যদের তো মন খারাপ হতে পারে? বুয়েনস এইরেস থাকা আসা লরেঞ্জো প্রশ্ন শুনে যেন বিস্মিত হন, ‘ওরা লিওর সঙ্গে খেলছে, এটাই তাদের বড় সৌভাগ্য। বিশ্বকাপ জেতানোর মানুষ একজনই—মেসি। ’
একটা সময় আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে অমন অবস্থান ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিতিয়ে এই কিংবদন্তি হয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার প্রতিটি ঘরের ফুটবলদেবতা। ফুটবল তো বটেই, রাজনীতি-সমাজ নিয়েও তিনি যা বলতেন তা-ই মানুষ গোগ্রাসে গিলত। তাঁকে দেবতার মতো বিশ্বাস করত আর্জেন্টিনার মানুষ। সে এক অদ্ভুত মোহ ছিল ম্যারাডোনায়। লিওনেল মেসির চরিত্রটি ভিন্ন, ফুটবল বিনে অন্য কিছুতেই আগ্রহী নন। খেলার বাইরে কোনো কথা নেই সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর। নিজের জীবনের সঙ্গে ফুটবলকে এমন আশ্চর্য এক মোড়কে বেঁধেছেন, সেখানে আসলে অন্য কারো তুলনা চলে না। কে বড়, কে ছোট—সেই বিতর্কে না গিয়ে শুধু ফুটবলের সঙ্গে তাঁর জাদুকরী প্রেম দেখলেই বোঝা যায় লিওর মহিমা। ‘মেসিক্যাল ফুটবল’ যেন শুধু উপভোগের। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে তাঁর ওই দুর্দান্ত গোলের পর স্টেডিয়ামে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। খুলে গেছে তাদের জয়ের পথ। সেটা দেখার পর লরেঞ্জো ফের বলে ওঠেন, ‘আমার কথা কি মিথ্যা! গোলের আগ পর্যন্ত আমাদের কিছু নেই। লিওর গোলে অস্ট্রেলিয়ার সব প্রতিরোধ ভেঙে গেল। গান হবে তাঁকে নিয়েই। ’ সেই গানের তালে সব শঙ্কা দূর করে আর্জেন্টিনা পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
আর্জেন্টাইন সমর্থকদের গান তো আর একটা নয়। কয়েক রকমের গান আছে তাদের। মেসি-ম্যারাডোনাকে মিলিয়ে দু-একটি গান। দুই তারকাকে পতাকায় একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে তারা স্প্যানিশে ধরে, ‘আমরা করব, আবার করব জয়। করব বিশ্বজয়। ম্যারাডোনার ’৮৬ ফিরবে। তোমরা পাবে নতুন বন্ধু, লিওর হাতে হাত রাখো…। ’ সবাই মিলে যখন এ রকম গান ধরে চারদিকে তখন অন্য রকম আবেগ তৈরি হয়। যার গলায় সুর নেই, সে-ও গলা মেলায় আর দু-পায়ে লাফাতে থাকে। প্রতিপক্ষ ব্রাজিল হলে আবার আরেক গান। সেই গানের বিষয়বস্তু ‘ম্যারাডোনা বনাম পেলে’। দুই দলই তখন গানে গানে টক্কর দেয় প্রতিপক্ষকে। কাতার এখনো সেই দৃশ্য দেখেনি। সব কিছু ঠিকঠাক চললে হয়তো সেমিফাইনালে দুই দলের সমর্থকদের আরেক লড়াই দেখা যাবে। তার আগ পর্যন্ত আলবিসেলেস্তেরাই চ্যাম্পিয়ন। তাদের মতো করে কেউ খেলাটা উদযাপন করতে জানে না। সমর্থনে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টাইনরা।