তহমিদুর রহমান, বগুড়া অফিস :
বর্তমান সময়ের আলোচিত চিত্রশিল্পী বগুড়ার তারিকুল ইসলাম। পড়াশোনা করছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে। পাশাপাশি বগুড়া আর্ট কলেজের বিএফ ডিগ্রিতে ড্রইং ও পেইন্টিং নিয়েও পড়াশোনা করছেন। তারিকুল বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী এলাকার মোঃ আব্দুল কাফি প্রামাণিকের ছেলে। এখন তিনি রামু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে চারুকলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিশ্বকাপ কে সামনে রেখে আলোচিত এই চিত্রশিল্পী এবার তিনি নিজ হাতে কাপড়ে আঁকলেন মেসি সবচেয়ে বড় ছবি। এই ছবিটি ৩রা ডিসেম্বর শনিবার প্রদর্শনী করা হয় কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে। এই প্রদর্শনীতে কাপড়ের উপর হাতে আঁকা মেসির সবচেয়ে বড় ছবি এবং কুমড়ার বীজে আঁকা মেসির ছবি দেখতে ভিড় করেন মেসি ভক্তরা। লিওনেল মেসির সবচেয়ে বড় ছবিটি সাদা কাপড়ে অ্যাক্রলিক রং দিয়ে আঁকা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৩৪ ফিট এবং প্রস্থ ২২ ফিট । মেসির এই একক চিত্র প্রদর্শনীতে সহযোগিতা করেছেন হাসিঘর ফাউন্ডেশন কক্সবাজার।
এ বিষয়ে চিত্রশিল্পী তারিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বকাপ কে সামনে রেখে আমার সব চেয়ে প্রিয় খেলোয়ার আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি সবচেয়ে বড় ছবি একেঁছি। আমি মনে করি, এই ছবিটি হবে বিশ্বের মধ্যে কাপড়ের উপর হাতে আঁকা মেসি সবচেয়ে বড় ছবি। এই ছবিতে আমি আকাশের সাত রং ব্যবহার করেছি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমার শিল্পকর্মকে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
সম্প্রতি তিনি দুই মাস আগে ১১ সেপ্টেম্বর সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে চুড়ান্তভাবে মনোনীত ১২ জন প্রার্থীকে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’-২০২২ প্রদান করা হয়েছে। চুড়ান্তভাবে মনোনীত ১২ জন প্রার্থীর মাঝে চারুকলা ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার পেয়েছেন বগুড়ার এই চিত্রশিল্পী।
তার শিল্পকর্মের মাঝে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দশ হাজার একশটি মিনিয়েচার ছবি। এই ছবি গুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করে এশিয়া বুক অব রেকর্ডে স্থান পেয়েছেন।
পেন্সিল ব্যবহার কওে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত (সংগৃহীত) জীবনী সুন্দও ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চিত্রশিল্পী তারিকুল ইসলাম। মজার বিষয় হচ্ছে এই বইটির দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি ও প্রস্থ দের ইঞ্চি। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে ২৫০টি। এর ৩৫ টি পেন্সিল স্কেচ ও ২১৫ টি জল রঙ্গে আঁকা ছবি রয়েছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা (রেনু), তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ছবিসহ জাতীয় চার নেতা,৭ ই মার্চের ভাষণ, ভাষা আন্দোলন, বীরশ্রেষ্ঠ সাতজনের ছবি, বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দী ছবি, বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর চোখে বাংলাদেশ, ৬ দফা আন্দোলন, গনহত্যা, মাওলানা ভাসানী, শের-ই বাংলা এ.কে.ফজলুল হক এবং ইয়াহিয়া খানসহ বিভিন্ন নেতাদের পোট্রেট রয়েছে এবং ঘটনা ক্রমে কাল্পনিকভাবে অনেক ছবি অঙ্কন করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ছবি এবং ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঘটনা পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে মোট ২৫০ টি ছবি রয়েছে এই শিল্প কর্মের ভিতর। এই বইটিতে মোট পৃষ্ঠা রয়েছে ৪১০ টি। এছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এঁকেছে প্রায় ১০,১০০ টি যার দৈর্ঘ্য ২ সে.মি এবং প্রস্থ ২.৫০ সে.মি। এই সকল ছবি জল রং দিয়ে এঁকেছেন তারিকুল। মুজিব বর্ষে এ ছবি গুলো দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আকারে সাজিয়ে একক চিত্র প্রদর্শনী করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রায় ৩০ লাখ সরিষা দানা ব্যবহার করে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ৫০ বর্গ ফুট ক্যানভাসে ফুঁটে তুলেছেন। ডিউজ বলে বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট তারকাদের প্রতিকৃতি একেঁছেন। কুমড়া বীজে প্রিয় খেলোয়াড় মেসির ছবি এঁকেছেন তারিকুল। এসব শিল্পকর্মের মাধ্যেমে জনমনে ব্যাপক সারা ফেলেছেন এই চিত্রশিল্পী।
নেপালের কাঠমান্ডু, মিয়ানমার ও ভারতে চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে বেশ কিছু পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। তার চিত্রকর্ম নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক প্রদর্শনী হয়েছে। ২০১৯ সালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ১৭ দেশের অংশগ্রহণে চিত্র প্রদর্শনী হয়। সেখানে তারিকুলের আঁকা বেশ কিছু ছবি স্থান পেয়েছে। এ ছাড়াও ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারিতেও তার চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে।